বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন
তানজিল জামান জয়, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)প্রতিনিধি।। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অধিকাংশই একশ্রেণির ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালক। তারা এখন কলাপাড়ার জনজীবনকে অশান্ত করে তুলেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিংবা সরকারি দলের নেতাদের ব্যক্তিগত ক্যাডার হয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ছে। সর্বশেষ ধানখালীর লোন্দা ব্রিজ এলাকা থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে চায়নিজ কুড়াল, ছ্যানা ও ছোরা নিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় ধানখালীর আতঙ্ক জাকারিয়া প্যাদা (৩০)।
স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন জাকারিয়ার মূল পেশা ছিল ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালক। ধুলাসার ইউনিয়নের চাপলী গ্রামের শাকিল মৃধা এখন কলাপাড়ার আলোচিত নাম। কয়েক মাস আগেও জীবিকার টানে ভাড়াটে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করতেন। এই শাকিল হঠাৎ করে মহিপুর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বনে যান (সম্মেলনবিহীন কমিটি)। প্রতিপক্ষকে মারধর চাঁদাবাজির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। শ্রমিক লীগের নেতা ঘোষণার রাতেই গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িয়ে যায়।
সে ওই মামলার এখন চার্জশিটভুক্ত আসামি। শাকিলের নেতৃত্বে তার বাহিনী চাপলী বাজারে প্রকাশ্যে ১৮ সেপ্টেম্বর গণধর্ষণ মামলার বাদী ছিদ্দিককে ঘণ্টাব্যাপী নির্যাতন করে। গুঁড়িয়ে দেয় ছিদ্দিকের দুই পা ও এক হাত। ১৯ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালীর পানামা হোটেলের পাঁচতলা থেকে র্যাব-৮ পটুয়াখালীর সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় তিন সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করে।
এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, ওয়ান শুটারগান, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে। সূত্র জানায়, শাকিলকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
রমজানপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের এক কিশোরীকে ২৭ জুন জঙ্গলে নিয়ে মুখ চেপে ধর্ষণ করা হয়। এখানেও মোটরসাইকেলে চড়ে গিয়ে বর্বর কান্ড ঘটায় এক বখাটে। সম্প্রতি চাকামইয়ার এক নববধূকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে পাশের বিলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। সেখানেও মোটরসাইকেল ব্যবহার করে নরপশুর দল। সম্প্রতি কুয়াকাটার একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে ঢুকে ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালক নবুয়ত ওরফে সাগর মৃধা এক ছাত্রী ও তাদের বন্ধুদের দেড় লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
এ ঘটনায় মহিপুর থানায় মামলা হয়েছে। আরেক ভাড়াটে হোন্ডাচালক কালা মিরাজ। চার-পাঁচ বছর আগে লালুয়ায় ভাড়াটে মোটরসাইকেলে যাত্রী টানত। সেখানেই বাড়ি। এখন গোটা টিয়াখালী ইউনিয়নের আতঙ্ক। দাপিয়ে বেড়ায় কলাপাড়ার সর্বত্র। সম্প্রতি লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা আনছার উদ্দিন মোল্লাকে কোপানো এবং এক জমি বিক্রেতার কাছে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে পুলিশের জালে আটকে গেছে মিরাজ। মামলা রয়েছে একাধিক। এখন জেলহাজতে। এভাবে চিহ্নিত অন্তত ২৫-৩০ ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালকসহ এই বাহিনীর শতাধিক রাজনৈতিক ক্যাডার শান্ত কলাপাড়াকে বর্তমানে অশান্ত করে তুলেছে। এদের ভয়ে তটস্থ থাকছে সাধারণ মানুষ। যদিও ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন অন্তত হাজার যুবকসহ সাধারণ মানুষ। কিন্তু গুটিকয়েক সন্ত্রাসীর কারণে সাধারণ চালকদেরও ভোগান্তি হচ্ছে। এজন্য সব ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালকদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক থাকা প্রয়োজন বলে উপজেলা আইনশৃঙ্খলার সভায় বহুবার উত্থাপন করা হয়েছে।
কলাপাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম ও মহিপুর থানার ওসি সোহেল আহাম্মদ জানান, এসব অপরাধীর তালিকা তৈরি করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। পটুয়াখালীর-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. মহিব্বুর রহমান জানান, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-মাদকবিরোধী কলাপাড়া গড়তে তিনি সর্বদা জনগণকে নিয়ে কাজ করছেন। প্রশাসনকে এসব দমনে নির্দেশনা দিয়েছেন। এরা কেউ দলে থাকতে পারবে না বলেও তিনি প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা দিয়েছেন।
Leave a Reply